রাইফেল ক্লাবঃ প্যাশন, বন্দুক, শিকার, ঐতিহ্য ও সাহসিকতার গল্প

“Rifle Club” এর চাকর থেকে বুড়া জোয়ান সকলেই বন্দুক শিকারি। রাইফেল ক্লাব এর গল্পে বন্দুকের প্যাশন, বন্ধুত্ব এবং সাহসিকতার এক অবিশ্বাস্য লড়াই! জানুন কীভাবে ঐতিহ্য রক্ষা করতে গ্যাংস্টারদের পরাস্ত করে এই ক্লাবের সদস্যরা।

পরিচিতি (Introduction):

“Rifle Club”, ২০২৪ সালের মালয়ালম ভাষার একটি অ্যাকশন ড্রামা সিনেমা, পরিচালনা করেছেন আশিক আবু। সিনেমাটি দর্শকদের নিয়ে যায় পশ্চিমঘাটের ঐতিহাসিক একটি রাইফেল ক্লাবের সাহসিকতার গল্পে,যে ক্লাব ব্রিটিশ থেকে টিপু সুলতান সকলেরই হাত বদল হয়েছে পরবর্তীতে এক খ্রিস্টান ফ্যামিলির দখলে ছিল যারা দক্ষ শিকারি। এক ঘটনার সূত্র পাতে গ্যাংস্টার দক্ষ শিকারিদের মধ্যে ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই মুভিটি শুধুমাত্র একটি অ্যাকশন ড্রামা নয়; এটি বন্ধুত্ব, একাত্মতা, এবং সাহসিকতার এক অন্যরকম উদাহরণ। সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই দর্শক ও সমালোচকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং বক্স অফিসে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করেছে। এই পর্যালোচনায় আমরা সিনেমার কাস্ট, গল্প, এবং এর উল্লেখযোগ্য দিকগুলো বিশ্লেষণ করব, এই সিনেমা আমাদের কোন কোন সিনেমা মনে করিয়ে দেয় তাও আলোচনা করব।


অভিনয়শিল্পী ও চরিত্র (Cast and Characters):

এই সিনেমার প্রধান চরিত্রে আছেন:

  • বিজয়ারাঘবন: কুঝিভেলি লোনাপ্পান রাইফেল ক্লাবের সাহসী নেতা এবং প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন।
  • দিলীশ পোথান: আভারান স্কারিয়া ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সে এই ক্লাবের সেক্রেটারি আর ক্লাবের সবকিছু দায়িত্ব তার কাছেই আছে ইভেন ব্রিটিশ টিপু সুলতানদের কাছ থেকে যেঅস্ত্রগুলো সংগ্রহ করে রাখা হয়েছিল সেই আন্ডার গোডাউনের চাবিও তার কাছেই থাকে।
  • অনুরাগ কাশ্যপ: দয়ানন্দ বেড়ে একটি শক্তিশালী ভিলেনের ভূমিকায় এই সিনেমায় তার অভিনয় এই মুভিতে প্রাণ ঢেলে দিয়েছে সর্বমহলে তিনি এই অভিনয়ের জন্য প্রশংসা পেয়েছেন।
  • ভানী বিশ্বনাথ ইত্তিয়ানম এবং সুরেশ কৃষ্ণা ডাঃ লাজার: সম্পূর্ণ গল্পকে প্রাণবন্ত করেছেন।
  • র‍্যাপার হনুমান কাইন্ড: ভিরা বেয়ার যা অভিনয় করেছে আর তার লুক হলিউড মাফিক তার এটি প্রথম সিনেমা সেটি কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই তার অভিনয়ে এতটাই সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল।

প্রত্যেক অভিনেতার পারফরম্যান্স অসাধারণ, যা সিনেমাটিকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে।


শিকারিরা গুলি চালানোর দক্ষতা প্রদর্শন করছে।

প্লট সংক্ষেপ (Plot Summary):

১৯৯১ সালে, পশ্চিমঘাটের একটি ঐতিহাসিক রাইফেল ক্লাব, ক্লাবটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে যুদ্ধ করে নিয়েছে টিপু সুলতানরা। টিপু সুলতান শাসন পতন হওয়ার পরে এক খ্রিস্টান পরিবাররা এই ক্লাব দখল করে, তখন থেকে তাদের কাছেই রয়েছে। তারা মূলত দক্ষ শিকারি ক্লাবটির কাজের লোক থেকে বৃদ্ধ জোয়ান সকলেই বন্দুক চালানোতে পারদর্শী। তিন পুরুষ থেকে তারাই পরিচালনা করছে এ ক্লাবটি তাদের কাছে এই ক্লাব একটি পরিবারের মত প্রতিটি সদস্যই তারা এমনভাবে থাকে যেন ছোটবেলার খেলার সাথী হাসি ঠাট্টা মজা মশকরা আর বন্দুকের প্যাশন এই ক্লাবের সদস্যদের জীবন। একদিন, একটি গ্যাংস্টার দল, তারা বড় মাপের অস্ত্র ব্যবসায়ী, ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে আসে। গল্পটি ক্লাবের সদস্যদের মজাই মজাই কম্পিটিশনের সাথে যুদ্ধ করা সাহসিকতা এবং তাদের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য সংঘটিত এক অসাধারণ লড়াই হিসেবে উপস্থাপন করে, এই লড়াই আর সিনেমার শেষ পর্যন্ত গল্প এককথায় মাস্টারপিস।

গল্পে প্রতিটি চরিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, এবং ক্লাবের সদস্যরা তাদের বন্ধুত্ব ও শিকারি দক্ষতার মাধ্যমে গ্যাংস্টারদের মোকাবিলা করে। গল্পের শেষ ভাগে ক্লাবের সদস্যরা দেখিয়ে দেয় যে ঐক্য এবং সাহস সবসময়ই বিজয় এনে দিতে পারে। তারা বন্দুক চালানোতে এতটাই দক্ষ প্রতিটা গুলি হিসাব করে চালিয়েছে এবং হিসাব শেষে বলেছিল ছয়টা গুলি বাঁচবে, মুভি শেষে ৬টা গুলি ফেরত পায়।

daraz
সবাই কিনুন সেরা দাম প্রতিদিন ক্লিক করুন এখানে

পুরো সিনেমার ব্যাখ্যা এবং সমাপ্তি (Full Movie Explanation and Ending Recap):

সিনেমার শুরু হয় রাইফেল ক্লাবের একটি সাধারণ দিনের চিত্র তুলে ধরে, যেখানে সদস্যরা শিকারি প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। তাদের ক্লাবের নতুন সদস্য এড হয় সে জনপ্রিয় সিনেমা অভিনেতা শাহজাহান হঠাৎ করে অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং তার গ্যাং ক্লাবটিকে হুমকি দেয়। অন্যদিকে ক্লাবের সেক্রেটারি, সে শাহজাহানকে নিয়ে জঙ্গলে শিকারিতে যায়। তখনই প্রথম অ্যাটাকটি হয় তবে সবাই যেহেতু বন্দুক চালানো দক্ষ তাই খুব সহজেই প্রথম অ্যাটাক ক্লাবের মেম্বাররা সামলিয়ে নেয়।

গ্যাংস্টারের দলটি দ্বিতীয়বার আরও শক্তিশালী আক্রমণ চালায়, ক্লাবের সেক্রেটারি আভারানের স্ত্রী সিসিলি জঙ্গলে সিগন্যাল পাঠায়। আভারান শাহাজানদের নিয়ে ক্লাবে ফিরে আসে এবং সকলে মিলে এই গ্যাংস্টারদের মোকাবেলা করে।

শেষ পর্যায়ে, রাইফেল ক্লাবের সদস্যরা গ্যাংস্টারের দলকে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করে এবং ক্লাবের ঐতিহ্য রক্ষায় সফল হয়। সিনেমার শেষ দৃশ্যটি ক্লাবের সাহসিকতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে ফুটে ওঠে। আভারন আর দয়ানন্দ বেরের যে কেমিস্ট্রি এখানে দেখানো হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে যে আবরণ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই সিনেমাকে এখানেই প্রশংসার দাবিদার করে যা সব জায়গা থেকে প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়ে এসে দেয়। আপনারা চাইলে সম্পন্ন মুভির এক্সপ্লেনেশন আমার ইউটিউব চ্যানেল থেকে দেখতে পারেন নিচে ভিডিওটি দেওয়া আছে ভিডিওটি ভালো লাগলে চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করবেন।


রাইফেল ক্লাবের অন্যান্য সিনেমার সাথে মিল বা অনুপ্রেরণা (Similarities or Inspirations):

“Rifle Club” সিনেমাটি মূলত শিকারি ক্লাবের ঐতিহ্য এবং সাহসিকতার গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত হলেও এটি অন্যান্য কয়েকটি জনপ্রিয় সিনেমার সাথে কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রথমেই উল্লেখযোগ্য হলো ক্লাব বা গ্রুপ ভিত্তিক একত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ধারণাটি, যা “Lagaan” বা “The Magnificent Seven”-এর মতো চলচ্চিত্রের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। এখানে ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ঐক্যের চিত্রায়ণ, যা দলগত লড়াইয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে, তা “Seven Samurai” বা “Kantara”-এর মত চলচ্চিত্রের সুর ধারণ করে।

এছাড়া, একজন শক্তিশালী ভিলেন এবং তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বা একটি ছোট দলের প্রতিরোধের কাহিনীটি অনেকটা “Gangs of Wasseypur” বা “Master”-এর কিছু অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

তবে “Rifle Club”-এর গল্প, শুটিং লোকেশন, এবং রাইফেল ক্লাবের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সিনেমাটিকে সম্পূর্ণ আলাদা ও অনন্য করে তুলেছে। এটি কোনো রিমেক নয়, বরং একটি স্বতন্ত্র কাহিনী যা মালয়ালম সিনেমার গল্প বলার ধারা আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে।

বাজেট এবং আয় (Budget and Income):

“Rifle Club”-এর প্রোডাকশন বাজেট ছিল প্রায় ১০ কোটি রুপি। সিনেমাটি মুক্তির পর প্রথম সপ্তাহেই বক্স অফিসে ৯ কোটি রুপি আয় করে, এবং মোট আয় ৩০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যায়। এটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত সফল একটি মুভি, ১৬ জানুয়ারি নেটফ্লিক্সে এই মুভি মুক্তি পেয়েছে।

গ্যাংস্টারের আক্রমণ এবং ক্লাবের সদস্যদের প্রতিরোধ।

সমালোচনা এবং আলোচিত খবর (Critics’ Reviews and News):

সিনেমাটি দর্শকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা পেলেও কিছু অংশ সমালোচকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।

  • প্রশংসিত দিক: সিনেমার ভিজ্যুয়াল, অভিনয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের দৃশ্য।
  • সমালোচিত দিক: মুভিটি বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই সিনেমার গল্প অনেক সময় তাল হারিয়ে ফেলেছে। তবে ওভারঅল যদি চিন্তা করা যায় সিনেমাটি আনন্দদায়ক একবারের জন্য দেখা যায়।

তবে, এটি মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে ২০২৪ সালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।


রেটিং (Ratings):

  • IMDb: ৭.১/১০
  • LETTERBOXD: ৩.৫/৫
  • আমার রেটিং: ৭/১০

কেন দেখবেন এবং সুপারিশ (Why Watch and Recommendation):

“Rifle Club” এমন একটি সিনেমা যা অ্যাকশন, থ্রিল, এবং আবেগের মিশ্রণে দর্শকদের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা দেয়। এর দৃশ্যায়ন এবং গল্প বলার ধরন এক কথায় অনন্য। সম্পূর্ণ সিনেমাটি ওটিটি প্লাটফর্ম নেটফ্লিক্সে পেয়ে যাবেন ।

রাইফেল ক্লাবের ঐতিহ্য রক্ষার লড়াইয়ের শেষ দৃশ্য।

জনপ্রিয় প্রশ্ন ও উত্তর (20 FAQs):

  1. Rifle Club সিনেমার মূল থিম কী?
    বন্ধুত্ব, সাহসিকতা এবং ঐতিহ্য রক্ষা।
  2. এই সিনেমার বাজেট কত ছিল?
    ১০ কোটি রুপি।
  3. সিনেমাটি কোথায় শুট করা হয়েছে?
    মুণ্ডাকায়াম, রাজামুন্দ্রি বন, থ্রিসুর এবং এরনাকুলামে।
  4. Rifle Club কি বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত?
    না, এটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
  5. এই সিনেমার পরিচালক কে?
    আশিক আবু।
  6. Rifle Club-এ কারা অভিনয় করেছেন?
    বিজয়ারাঘবন, দিলীশ পোথান, অনুরাগ কাশ্যপ, ভানী বিশ্বনাথ প্রমুখ।
  7. এই সিনেমার সংগীত কে পরিচালনা করেছেন?
    রেক্স বিজয়ান এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ইয়াকজান গ্যারি পেরেইরা ও নেহা নায়ার।
  8. Rifle Club কবে মুক্তি পায়?
    ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ই জানুয়ারি ২০২৫ নেটফ্লিক্সেও রিলিজ হয়।
  9. সিনেমাটি বক্স অফিসে কত আয় করেছে?
    প্রায় ৩০ কোটি রুপি।
  10. কেন Rifle Club দেখতে হবে?
    এটি বন্ধুত্ব, সাহসিকতা ও ঐতিহ্য রক্ষার অনন্য গল্প।
  11. এই সিনেমার শ্রেষ্ঠ দৃশ্য কোনটি?
    গ্যাংস্টারদের বিরুদ্ধে রাইফেল ক্লাবের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ।
  12. সিনেমার লেখক কারা?
    স্যাম পুষ্করণ, দিলীশ করুণাকরণ এবং সুহাস।
  13. ক্লাইম্যাক্সে কী ঘটে?
    রাইফেল ক্লাব গ্যাংস্টারদের পরাজিত করে তাদের ঐতিহ্য রক্ষা করে।
  14. Rifle Club কি একটি ফ্যামিলি মুভি?
    এটি মূলত একটি অ্যাকশন ড্রামা, তবে পরিবারসহ দেখা যেতে পারে।
  15. এই সিনেমাটি কাদের জন্য উপযুক্ত?
    অ্যাকশন ও থ্রিলপ্রেমীদের জন্য।
  16. Rifle Club-এর রেটিং কেমন?
    IMDb-এ ৭.১/১০ এবং Rotten Tomatoes-এ ৯০%।
  17. ক্লাবের সদস্যরা কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে?
    তাদের শিকারি দক্ষতা এবং ঐক্য ব্যবহার করে।
  18. সিনেমাটিতে অনুরাগ কাশ্যপের চরিত্র কেমন?
    একজন শক্তিশালী এবং চিত্তাকর্ষক ভিলেন।
  19. সিনেমার বিশেষত্ব কী?
    শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাকশন, বন্ধুত্বের গল্প এবং ঐতিহাসিক ক্লাবের ঐতিহ্য।
  20. সিনেমাটি দেখতে কোথায় পাবেন?
    নেটফ্লিক্সে।
“Rifle Club” একটি অ্যাকশন-প্যাকড এবং হৃদয়গ্রাহী সিনেমা যা আপনার সময় এবং মনোযোগ দাবী করে। সিনেমাটি দেখার জন্য আপনাকে সুপারিশ করব। মুভিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে আপনার কেমন লেগেছে আর কোন কোন বিষয়ে জানার আগ্রহ রয়েছে আপনার তা কমেন্ট করে আমাদের জানান। আমরা চেষ্টা করব আপনার জন্য নতুন তথ্য সংগ্রহ করার। নিচের সিনেমাটি সম্পর্কেও জানতে পারেন সিনেমাটি আপনাকে ভালো অনুভব করাবে।